বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে দেশের স্বাস্থ্য খাতে

0
12

বিশেষ প্রতিবেদক: দেশের সব উন্নয়ন তখনই সার্থক হবে, যখন নাগরিকরা সুস্থ থাকবে। সুউচ্চ ভবন, বড় বড় সড়ক-সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইট-পাথর, লোহালক্কড় নির্ভর উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে যদি মানুষ সুস্থ না থাকে। দেশের সব উন্নয়ন তখনই সার্থক হবে, যখন নাগরিকরা সুস্থ থাকবে। সুউচ্চ ভবন, বড় বড় সড়ক-সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইট-পাথর, লোহালক্কড়নির্ভর উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে যদি মানুষ সুস্থ না থাকে। উঁচু ভবন, পাকা সড়ক, সেতু, মেগা অবকাঠামো নির্মাণে যেমন বিনিয়োগ দরকার, ঠিক একইভাবে বিনিয়োগ করতে হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে। ‘বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ ২০২৫’-এ এসব কথা বলেন বক্তারা। দেশের টেকসই উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা। ‘উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সমৃদ্ধ দেশ’ প্রতিপাদ্যে গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জনস্বাস্থ্য, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক মান এবং স্বাস্থ্য-ওষুধ খাতের প্রবিধান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাবিষয়ক প্যানেলে আলোচনায় অংশ নেন দেশের স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, চিকিৎসক, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা।
‘বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ ২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘মানসম্মত মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিক অধিকার। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ কারণেও সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-ঘাটতি কোথায় এবং প্রতি বছর কেন মানুষ বিদেশে অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে যায়, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করি।’
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা থাকায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে সরকারি অনেক বড় বড় অবকাঠামো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও অবকাঠামো আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। আবার কোথাও ডাক্তার আছে, নার্স নেই। এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করলে স্বাস্থ্য খাতের আরো উন্নয়ন সম্ভব।’
ছোট স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া যায় কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, এমনটা করা গেলে সরকারের ওপর চাপ কমবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও দক্ষতা কাজে লাগানো যাবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে বিএনপি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে।’ অন্যদিকে ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ-সেনাবাহিনীর মতো স্বাস্থ্য খাতেরও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন; তবে নিয়ন্ত্রণ মানে নিবর্তন নয়। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ যেন দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ন্ত্রণটা যেন একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থাকে।’
সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালন বিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো আইন নেই। তবে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেন এক আইন মেনে চলে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিএনপি দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। মানুষকে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারলে সামাজিক সুরক্ষায় খরচ কমে যাবে। একজন মানুষ যদি তার পরিবারের খরচ কমাতে পারে তাহলে তার জীবন ব্যবস্থা, জীবন নির্বাহ সহজ হবে। আমরা হিসাব করেই সে নীতিতে এগোচ্ছি।’
বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, ‘সামাজিক মানদণ্ডে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা প্রায় শীর্ষে। কিন্তু কোনো কারণে স্বাস্থ্য খাতে এর প্রতিফলন ঘটতে দেখিনি। স্বাস্থ্যে আমাদের জনগণের ব্যয় আফগানিস্তানের চেয়েও বেশি। এ ব্যর্থতার পেছনে অন্যতম কারণ হলো আমরা প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এগুলো সরকারের দায়িত্ব ছিল।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমাদের দেশে সব খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতেও সংস্কার দরকার। এখানে দুর্নীতি বড় একটি ইস্যু। ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির অনেকে ওষুধ প্রেসক্রাইব করার জন্য ডাক্তারদের টাকা দেন। রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলার জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায় ডাক্তার কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছে কিনা সেটা দেখতে। এর জন্য ইন্ডাস্ট্রির ২০ শতাংশ খরচ বাড়ে। সংস্কারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোও প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা অস্বীকার করতে পারব না, ডাক্তারদের প্রমোশন, পদায়ন, পোস্টিংয়ে অনিয়ম নেই। আল্লাহ যদি আমাদের ক্ষমতা দেন প্রথমেই অটোমেশন সিস্টেম চালু করব; যেখানে ডাক্তারদের প্রমোশনের জন্য ঘুস দিতে হবে না, ট্রান্সফারের জন্য তদবির লাগবে না।’ সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আসলে ১৭ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পুরোটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা দেখছি, ৭৩ শতাংশ সেবা আসছে সরকারের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এখানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও আছে। তবে আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি কমাতে হলে একে অপরকে দোষারোপ না করে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একত্র হওয়ার বিকল্প নেই।’
স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাত অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে উল্লেখ করে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এমন কথা উঠেছে। এগুলো অপমানজনক। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে প্রাইভেট সেক্টর অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে। এজন্য তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু না দিলে দেশ এগোবে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে যারা কাজ করছেন বিশেষ করে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান, যারা পরিচালনা করছেন তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।’
স্বাস্থ্য-ওষুধ খাতের প্রবিধান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে বৈষম্য দূর করার জন্য। এর ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে ৩৩ সুপারিশমালা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহকারী হিসেবে যুক্ত রয়েছে।’
বেসরকারি খাতের গুরুত্ব ও জনসচেতনতায় জোর দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব নয়। দেশের মোট স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারি সংস্থা, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে বেসরকারি খাতের এ অবদান অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করাও জরুরি।’
বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক মান শিরোনামের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘আমরা পেশাজীবীরা যতই আলোচনা করি না কেন, যেদিন রাজনৈতিক অঙ্গীকার হবে সেদিনই স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হবে। রাজনৈতিক নেতারা আজকের আলোচনায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ রাখবেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বর্তমানে এটি ১ শতাংশের কম। স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষায় কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেবার কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হচ্ছে। আমরা যদি রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে যেতাম তাহলে এ অবস্থার উন্নতি হতো।’
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ উচ্চতর সেবা ও শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান।
প্যানেল আলোচনায় ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের মেডিকেল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে খুবই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ডাক্তার, নার্স রয়েছেন। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে সব ধরনের চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব, এটা প্রমাণিত। তার পরও দেশের বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হয়।’ বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে এ নেতিবাচক প্রচারণা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান ডা. আজহারুল ইসলাম খান।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সাত লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে এবং এ বাবদ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন (৩৫০ কোটি) ডলার ব্যয় হচ্ছে মন্তব্য করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ কার্যালয়ের হেলথ সিস্টেম ইউনিটের টিম লিডার সাঙ্গে ওয়াংমো বলেন, ‘এটি স্বাস্থ্যসেবার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অবিশ্বাসের প্রতিফলন। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রয়োজন। প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের সমন্বয় করা দরকার।’
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএম শামীম বলেন, ‘সবাই বলে প্রাইভেট হেলথ কেয়ার অনেক ফি নেয়, অনেক মুনাফা করে। আমি প্রায়ই গ্রামগঞ্জে যাই। আমাদের ৮০ শতাংশ প্রাইভেট হেলথ কেয়ার লোকসানে আছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা সম্পদ বিক্রি করে টিকে আছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম কোম্পানির অত্যাচার (অতিরিক্ত দাম), লাইসেন্স পাওয়ার ঝামেলা, নতুন বিনিয়োগ—সব মিলিয়ে প্রাইভেট হেলথ কেয়ার সেক্টর ভালো নেই।’
বাংলাদেশ ভালো না, বাংলাদেশের চিকিৎসা ভালো না—এমন নেতিবাচক সামাজিক প্রচারণা ‘ফ্যাশন’-এ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ডা. এএম শামীম বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি খাতের অনেক অর্জন আছে। কভিডে কাজ করেছি। ভারত এক বছর ভিসা বন্ধ রেখেছে। এ সময়ে চিকিৎসার অভাবে একজন রোগী মারা গেছেন? ভারতে যেতে পারিনি বলে মারা যাচ্ছি এমন কেউ বলেছেন? বলেননি। আমাদের ওপর, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখুন।’
দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অনেক অবদান থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকে অনেক ঘাটতি থাকলেও তারা ৭৩ শতাংশ সেবা দিচ্ছে। অথচ বাস্তবতার নিরিখে বেসরকারি খাতকে উপেক্ষা করা হয়। আমাদের দরকার সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়।’
জনস্বাস্থ্য বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। দেশে স্বাস্থ্যসেবার পেছনে প্রতি ১০০ টাকায় ৭৪ টাকা ব্যয় করতে হয় রোগীকে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। দেশে স্বাস্থ্যসেবার পেছনে প্রতি ১০০ টাকায় ৭৪ টাকা ব্যয় করতে হয় রোগীকে। এটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার স্বাস্থ্য খাতে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সেটি ঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা আমাদের সে বিষয়েও ভাবতে হবে।’
স্বাস্থ্য খাতের জন্য মাস্টারপ্ল্যানের প্রয়োজন উল্লেখ করে আসিফ সালেহ্‌ বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে অসাধারণ সব মডেল আছে। থাইল্যান্ড তাদের মডেল ব্যবহার করে এগিয়ে গেছে। সে ধরনের মডেল আমরাও ব্যবহার করতে পারি।’
বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা তৈরিতে গুরুত্বারোপ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল টেলিহেলথ সার্ভিসেসের সিইও ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৫৫ বছরের পুরনো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। জিডিপির ১ শতাংশের কম বরাদ্দ পাচ্ছে স্বাস্থ্য। তাহলে তো পাবলিকের পকেটের টাকা খরচ হবেই। দেশের স্বাস্থ্যসেবার ৭০ শতাংশই বেসরকারি খাত সরবরাহ করে। বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় চিকিৎসার ওপর আস্থা তৈরি করতে হবে। গত এক বছরে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কমেছে।’
হেলথ কনক্লেভে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে আমরা অনেকগুলো সুপারিশ করেছি, কিন্তু তার কোনো কিছুরই বাস্তবায়ন হয়নি। কমিশনের প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি, সেগুলো জাতীয়ভাবে উপস্থাপন হয়েছে কিনা এখনো জানি না। আমরা শাসন ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা, দীর্ঘমেয়াদি নজরদারির জন্য হেলথ কমিশন গঠন করতে চেয়েছি। এগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে কিনা এখন পর্যন্ত জানি না। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে দেশে নতুন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি।’
বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, অনকোলজি বিভাগ) এসএম মাহমুদুল হক পল্লব বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় অংশ হলো ওষুধ। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত খরচের একটির বড় অংশ যায় ওষুধের পেছনে। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতির পর এ খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধই সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে উৎপাদন করছি। এখন দেশে ক্যান্সারের ওষুধও সুলভ মূল্যে উৎপাদন হয়। অসংক্রামক রোগের মধ্যে বাংলাদেশে ক্যান্সারে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। ক্যান্সারের সব স্টেজের ওষুধ এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের কেমোথেরাপি প্রটোকলের জন্য ব্যাংককে যেখানে ৬ লাখ টাকা লাগে বাংলাদেশে সেটি মাত্র ৬০ হাজার টাকায় মিলছে। নীতিসহায়তা পেলে এ খাতে আমরা আরো অনেক উন্নতি করতে পারব।’
হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ‘হৃদরোগের চিকিৎসায় আমরা অন্যান্য দেশকে চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা হৃদরোগের চিকিৎসকরা বিগত ২০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের এ খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করে তুলে ধরেছি। এখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে আলাদা চোখে দেখা যাবে না। আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করব।’
স্বাস্থ্য খাতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সুদহার অন্যান্য খাতের মতোই মন্তব্য করে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘অনেকের আলোচনায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের বিষয়টি উঠে এসেছে। একজন ব্যাংকার হিসেবে আমি দেখছি, স্বাস্থ্য খাতে ঋণের সুদহার অন্যান্য খাতের মতোই। ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার পর এখন সরকারি ব্যাংকগুলো ১২-১৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদহার আরো বেশি। খেলাপির হার বেশি হওয়ার প্রভাবে ঋণের সুদ কমানো যাচ্ছে না। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এভাবে ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়া অযৌক্তিক। তবে কীভাবে ব্যাংক ঋণের বিদ্যমান সুদহার আরেকটু সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়, সেটি দেখা দরকার।’
জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অটোডিজেবল সিরিঞ্জ (একবার ব্যবহারযোগ্য) বাংলাদেশে তৈরির ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচওর লাইসেন্সপ্রাপ্ত একমাত্র কোম্পানি জেএমআই। গত ১৬ বছর যত ভ্যাকসিনেশন হয়েছে একচেটিয়াভাবে সবগুলোর সাপ্লাই আমরা দিয়েছি। কভিডকালীন ৩০ কোটি সিরিঞ্জ সরকারকে সরবরাহ করেছি। কিন্তু সর্বশেষ তিন বছরে এক পিস সিরিঞ্জও আমাদের থেকে নেয়া হয়নি। বাইরে থেকে আমদানি করা হয়েছে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পাশে থাকুন।’
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মানুষ যে মন্তব্য করে তা হলো এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কম। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ বেশি। চিকিৎসকরা বেশি সময় দেন না। রোগীরা বিদেশে চলে যায়। এ কথা কিছুটা সঠিক। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে এ খাতের মানদণ্ড ঠিক করতে হবে। প্রাইভেট মেডিকেলের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড আছে। একইভাবে প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা খাতেও অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড গঠন করতে হবে।’
‘বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ ২০২৫’-এ উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, প্রাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আবদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এমএ মঈন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমিন, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্য ডা. সুচরিতা আহমেদ, লংকাবাংলা ক্যাপিটাল মার্কেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ মোল্লা, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইমাম শাহীন ও নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম বিশ্বাস।
সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব হেলথ (ওআইসি) ডা. সি সলোমন, ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর এটিএম তারিকুল ইসলাম, হীড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন, এমিনেন্স এসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, শক্তি ফাউন্ডেশনের হেড অব হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জের সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. শমসের আলী খান, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (প্রোগ্রামস) মো. মাহিন চৌধুরী, ল্যাবএইড ধানমন্ডি হসপিটালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহমেদ দাউদ, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান, স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. ইসাম ইবনে ইউসুফ সিদ্দিক, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সিইও আমজাদ হোসেন খান চৌধুরী, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক ও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটালের হেড অব অপারেশন ইফতেখার আহমেদ, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (মার্কেটিং অ্যান্ড কমার্শিয়াল) এসএম নূর হোসাইন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মিজানুর রহমান, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক (প্লাস্টিক সার্জারি) ডা. তানভীর আহমেদ, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মেজর (অব.) ডা. আব্দুল ওহাব মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম রেজা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড‘বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ ২০২৫’-এর লিড স্পন্সর ছিল, প্লাটিনাম স্পন্সর ইউনাইটেড হেলথকেয়ার ও গোল্ড স্পন্সর ছিল ল্যাবএইড হসপিটাল ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here