
আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রতিবেদক: জমিতে লড়াই চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠায় গত কয়েক মাস ধরেই জুন্টা সেনার যুদ্ধবিমান ও প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীদের উপর। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আলোর উৎসবে হঠাৎ চোখ ধাঁধানো আলো। আর তার পরেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ! গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত মায়ানমারের সাগিয়াং প্রদেশে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এ ভাবেই প্যারাগ্লাইডার বোমার হামলা চালিয়ে অন্তত ৩৮ জন সাধারণ নাগরিককে মেরে ফেলল মায়ানমারের জুন্টা সরকারের সেনা। গুরুতর আহত আরও বেশি। ঘটনাচক্রে, হামলাকারী সেই সামরিক জোটও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরই!
মায়ানমারের জুন্টাবিরোধী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইয়াওয়াডি জানাচ্ছে, সোমবার রাতে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সাগিয়াং প্রদেশের মধ্যাঞ্চলের চাউং উ টাউনশিপে শত শত মানুষ থাদিংগ্যুত পূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেই প্যারাগ্লাইডার হামলা চালানো হয়। জমিতে লড়াই চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠায় গত কয়েক মাস ধরেই জুন্টা সেনার যুদ্ধবিমান ও প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীদের উপর। এ বার তারা ধর্মীয় উৎসবকেও ছাড় দিল না।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির ঘাঁটির এবং অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তঘেঁষা কাচিন প্রদেশে আর সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী ‘কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ)-র ডেরায় মায়ানমার সেনা প্যারাগ্লাইডার হামলা চালিয়েছিল। তাতেও সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এ বার সুনির্দিষ্ট ভাবে ধর্মীয় উৎসবকে আক্রমণের নিশানা করা হল! ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে নতুন জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ গড়ে সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’। ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ)-র পাশাপাশি সেই ত্রিদলীয় জোটের অন্যতম সহযোগী ছিল ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)।
সম্প্রতি এমএনডিএএ শান্তিচুক্তি করলেও পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হওয়া ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)-ও এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে সামরিক জুন্টা সরকার সম্প্রতি পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করে গণতন্ত্র পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু গৃহযুদ্ধের ইতি হয়নি এখনও।