

বি এম শফিকুল ইসলাম টিটু, সিনিয়র চীফ রিপোর্টার (বাংলাদেশ), এশিয়া মহাদেশ: বর্তমান পৃথিবীতে চলমান বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্ববহ আলোচিত ইস্যু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। ভূমণ্ডলের তাপমাত্রা বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণগুলোর মধ্যে একটি। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে গত ২০ বছরে প্রায় ১৬৯ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যা দেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের পানকি প্রধান উৎস হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশই ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে মাদ্রিদে কপ-২৫ লিডার্স সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়টি তুলে এনে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও গণমাধ্যমের ভূমিকায় পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ:
‘জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব বন্ধ করা না গেলে আমরা কখনোই এসডিজি অর্জন এবং দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারব না।
আইপিসিসিদ্ধর (ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্ছাজ) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আইপিসিসিদ্ধর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইপিসিসি আশঙ্কা করছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪ সেন্টিগ্রেড বাড়লে ২০৮০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬২ সেন্টিমিটার বাড়বে। হারিয়ে যাবে উপকূলের ১৩ শতাংশ জমি। আর প্লাবিত হবে এখনকার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি জমি। আর ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটার বাড়লে ৩ শতাংশ জমি হারিয়ে যাবে, প্লাবিত হবে ৬ শতাংশের বেশি ভূমি।
জলবাযু পরিবর্তন মূলত একটি প্রধান সামাজিক সমস্যা। এই ক্ষতিকর প্রভাব রুখতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জনগণকে সহজ ভাষায় এর প’ভাব বোঝানো ও ঝুঁকি এড়াতে প্রশাসনের সাথে যেদ্বথভাবে কাজ করতে পারলে অনেকাংশেই বিপর্যয় কমানো সম্ভব। মিডিয়া তথ্য পরিবেশন করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিষয়টিকে সাধারণ জনগণের কাছে গুরুত্ববহ করে তোলার জন্য বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় তথ্য পরিবেশন করে সচেতনতা তৈরি করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখা দরকার।
উপকূলবর্তী অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশের সামগ্রিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কক্সবাজারেও অত্যাধিক। এ অবস্থায় স্থানীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা কতখানি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য তাদের উদ্যোগ কী বা আবহাওয়ার প্রভাব সর্ম্পকিত বিষয়াবলি নিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া বার্তা আসলে কতটুকু কার্যকর; এসব নানা বিষয়ের উত্তর খুঁজে বিষয়টিকে বিশ্লেষণের তাগিদ থেকেই আলোচ্য গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
গবেষণার যৌক্তিকতা:
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সরাসরি বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকলেও এর ক্ষতিকর প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০১৯ সালে জার্মানিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘জার্মান ওয়াচদ্ধ এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প’ভাব দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি। বিশেষ করে দেশের সমুদ্র-উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ আরও বেশি হুমকির সম্মুখীন।
এ অবস্থায় স্থানীয় গণমাধ্যমসমূহ তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিষয়টিতে যতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে, সে বিষয়ে স্থানীয়দের কতটুকু সচেতন করছে সেটি জানা জরুরি। গণমাধ্যমসমূহ এ বিষয়ে সর্বাধিক কাভারেজ দিলে সেটি নীতি-নির্ধারকদের নীতি প্রণয়নে যেমন উদ্বুদ্ধ করতে পারবে এবং সাধারণ জনগণ বা স্থানীয়দের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারবে তেমনি সাধারণ মানুষের ভাবনাগুলো এতে সম্পৃক্ত হলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম কতটুকু দায়িত্বশীল আচরণ করে স্থানীয়দের সচেতন করতে পারছে সেটি গবেষণার প্রয়োজনীয়তা থেকেই গবেষণাকর্মটি সম্পনড়ব করা হয়েছে। এই গবেষণা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তিযুক্ত।
(ধারাবাহিক- প্রথম পর্ব)